বিশ্বের জনসংখ্যার খাবারের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করা সত্ত্বেও প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ এখনও খাদ্যের অপচয়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য কারণে খাদ্যের অভাবে ভুগছে। অধিকন্তু, জাতিসংঘ পপুলেশন ডিভিশন এর তথ্যমতে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জনসংখ্যা প্রায় ১০ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এই সংখ্যক মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করার জন্য কৃষি উৎপাদন প্রায় ৬০% বৃদ্ধি করতে হবে। এমতাবস্থায়, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সর্বোচ্চ ফলন বাড়াতে কৃষি খাতের উপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করছে। ক্রমবর্ধমান খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা করার জন্য দুটি সম্ভাব্য পন্থা উদ্ভূত হয়েছে। প্রথমত, কৃষি জমির ব্যবহার সম্প্রসারণ করা এবং বৃহৎ আকারের চাষাবাদ গ্রহণ করা। দ্বিতীয়ত, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের সাহায্যে উদ্ভাবনী পদ্ধতি গ্রহণ করা এবং বিদ্যমান কৃষি জমিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি লাভ করা।
মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তি নির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাকে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে। পৃথিবীতে বর্তমানে বিদ্যমান আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স মূলত দুই প্রকার। এক প্রকারকে বলা হয় অঘও (অৎঃরভরপরধষ ঘধৎৎড়ি ওহঃবষষরমবহপব). এটি মূলত নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। এর বাহিরে এটি অন্য কোন কাজ করতে পারে না। আমাদের দৈনন্দিন চলার পথে রুট কিংবা অপরিচিত স্থান খোঁজার কাজে ব্যবহৃত গুগল ম্যাপ এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। দ্বিতীয় প্রকারকে অএও (অৎঃরভরপরধষ এবহবৎধষ ওহঃবষষরমবহপব) বলা হয়। এটি মানুষের বুদ্ধির সাথে তুলনীয় স্তরে কাজ করতে পারে। এর একটি সাধারণীকরণ এবং অভিযোজনযোগ্যতার ক্ষমতা থাকবে এবং জ্ঞানকে বুঝার, শেখার এবং প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখবে। এটি নির্দিষ্ট কোন কাজে সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন বুদ্ধিভিত্তিক কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম হবে। কৃষিতে ব্যবহৃত আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স মূলত দ্বিতীয় প্রকারের।
কৃষিকাজ বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেশাগুলির মধ্যে একটি। এটি সহস্রাব্দ ধরে মানব সভ্যতার মেরুদন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভরণপোষণ প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখছে। এমনকি সবচেয়ে পুরনো এআই মাত্র কয়েক দশক আগে আবিষ্কৃত হয়েছিলো। তা সত্ত্বেও প্রতিটি শিল্পে এর মাধ্যমে উদ্ভাবনী ধারণা চালু করা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, কৃষিও এর ব্যতিক্রম নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্ব কৃষি প্রযুক্তিতে দ্রুত অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করছে। বিশ্বব্যাপী কৃষি শিল্প টিকিয়ে রাখতে এবং বর্ধমান খাদ্য ঘাটতি পূরণ করতে কৃষিতে এআইয়ের ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে।
ঐতিহ্যগতভাবে আমরা কৃষিকে চালিয়ে নিতে চাইলে আমাদের কৃষকদের নানারকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। জলবায়ুর পরিবর্তনশীলতা, যেমন:- বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং আদ্রতা সবই ফসল উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। প্রাকৃতিক এসব সমস্যার কারণে-
কৃষকদের কিভাবে মাটি প্রস্তুত করতে হবে, বীজ কখন বপন করতে হবে এবং ফসল কখন কাটতে হবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন করে তোলে।
প্রতিটি ফসলের জন্য নির্দিষ্ট ধরনের পুষ্টির প্রয়োজন হয়। মাঠজুড়ে মাটির উর্বরতা একই রকম নয়, যার ফলে পুষ্টির অপ্রতুলতার কারণে ফসল নিম্নমানের হতে পারে।
ফসল উৎপাদনে আগাছা নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ন্ত্রিত না হলে এটি উৎপাদন খরচ বাড়াতে পারে এবং মাটি থেকে খনিজ গ্রহণ করতে পারে। যার কারনে ফসলে খনিজ এর অভাবে জনসংখ্যার পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
চাষাবাদের জন্য শ্রমিকের অভাবও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সর্বোচ্চ চাষের সময় প্রয়োজনের চেয়ে শ্রমিক সংখ্যার অপ্রতুলতার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফসল চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না।
কৃষিতে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে ডেটা ভিত্তিক সিদ্ধান্ত ও অটোমেশন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমানে অনেক দেশে এআইয়ের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অবশ্যম্ভাবী অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে।
কৃষিক্ষেত্রে এআই যেভাবে ভূমিকা রাখতে পারে-
বাজারের চাহিদা বিশ্লেষণ করা আধুনিক কৃষির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। উবংপধৎঃবং খধনং নামে নিউ মেক্সিকো ভিত্তিক একটি কোম্পানি কৃষকদের বাজারের চাহিদা মূল্যায়নে সাহায্য করার জন্য এআই চালিত প্ল্যাটফর্ম অফার করে থাকে। কোম্পানিটি বাজারের তথ্য ও ভোক্তার চাহিদা সংগ্রহ করে ডেটা প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তিটি নির্দিষ্ট ফসলের বাজারের চাহিদার পূর্বাভাস দিতে পারে এবং কৃষকদের তাদের লাভ সর্বাধিক করতে সাহায্য করে থাকে।
হাইব্রিড বীজ তৈরির প্রক্রিয়াটি কৃষি শিল্পে বহু বছর ধরে চলে আসলেও এখন এআই এর মাধ্যমে এর ক্ষেত্র আরো প্রসারিত হয়েছে। উদ্ভিদের বৃদ্ধির তথ্য সংগ্রহ করে এআই এমন ফসল উৎপাদন করতে পারে, যা রোগের ঝুঁকি কমায় এবং আবহাওয়ার সাথে ভালোভাবে খাপ খায়। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে ভালো কর্মদক্ষতাকারী উদ্ভিদের জাত সনাক্ত করতে এবং আরো ভালো হাইব্রিড তৈরি করতে তাদের ক্রসবিড করতে পারেন। ঝববফ-ঢ এর মতো এআই প্রযুক্তি বীজের জিনোমিক তথ্য সংগ্রহ করার প্রক্রিয়াটিকে গতিশীল করতে এবং সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
একটি লাভজনক ফসল ও একটি ব্যর্থ ফসলের মধ্যে পার্থক্য হল বীজ বপনের সময়ের একটি সাধারণ ডেটা পয়েন্টের সময়োপযোগী তথ্য। খারাপ ফসলের ব্যর্থতা রোধ করার জন্য হায়েদ্রাবাদ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈৎড়ঢ়ং জবংবধৎপয ওহংঃরঃঁঃব ভড়ৎ ঞযব ঝবসর অৎরফ ঞৎড়ঢ়রপং (ওঈজওঝঅঞ) এর বিজ্ঞানীরা সর্বাধিক ফলন পাওয়ার লক্ষ্যে বীজ বপনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করার জন্য এআই এর ব্যবহার করেছেন। এমনকি এটি ৭ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছাড়াও মাটির স্বাস্থ্য এবং সারের প্রয়োজনীয়তার তথ্যও দিতে পারে।
চাষ করার পূর্বে মাটি পর্যবেক্ষণ করা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া ভালো ফলন পাওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মাটিতে মাইক্রো ও ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলো ফসলের স্বাস্থ্য, ফলনের পরিমাণ এবং গুণমান এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাটিতে পুষ্টির ভুল সংমিশ্রণ ফসলের স্বাস্থ্য এবং বৃদ্ধিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এআই তার সেন্সরের মাধ্যমে মাটির প্রয়োজনীয় গুণমানের চাহিদার তথ্য সরবরাহ করবে এবং চাহিদানুযায়ী অন্য এআই মাটির প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে মাটির সমস্যার সমাধান করে দিবে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কম্পিউটার ভিশন কতটা ভালোভাবে মাটির গঠন এবং মাটির জৈব পদার্থ চিহ্নিত করতে পারে। সাধারণত মাটি মূল্যায়নের জন্য সময় ও শক্তি ক্ষয় করে কৃষকদের নমুনা খনন করতে হয় এবং বিশ্লেষণের জন্য একটি ল্যাবে আনতে হয়, যা অনেক সময় সাপেক্ষ পদ্ধতি। নিশ্চিতভাবেই কম্পিউটার ভিশন মডেলটি ব্যয়বহুল ল্যাব প্রক্রিয়াকরণের চেয়ে তুলনামূলক কম সময় ও কম ব্যয় সাপেক্ষ এবং নির্ভুলতার সাথে মাটির জৈব পদার্থ চিহ্নিত করতে পারে। সুতরাং, কম্পিউটার ভিশন শুধুমাত্র মাটি পর্যবেক্ষণের সাথে জড়িত প্রচুর পরিমাণে কঠিন এবং কায়িক শ্রমকেই শুধু দূর করতে পারে না, অনেকক্ষেত্রে এটি মানুষের চেয়ে বেশি কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম।
এআই অ্যালগরিদম এর মাধ্যমে স্বাধীন ফসল ব্যবস্থাপনা সক্ষম হয়। ওঙঞ সেন্সর মাটির আদ্রতা স্থল এবং আবহাওয়ার অবস্থা নিরীক্ষণের পাশাপাশি রিয়েল টাইমে সিদ্ধান্ত নিতে পারে ফসলে কতটা পানি সরবরাহ করতে হবে। একটি স্বাধীন ফসল ব্যবস্থাপনা টেকসই করতে স্বয়ংক্রিয় সেচ ব্যবস্থার বিকল্প নেই। স্বয়ংক্রিয় সেচ ব্যবস্থার পাশাপাশি সেচ ব্যবস্থায় ক্ষতি সনাক্ত করতেও এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডেটা বিশ্লেষণ করে অ্যালগরিদম প্যাটার্ন এবং অসঙ্গতিগুলি শনাক্ত করতে পারে যা সম্ভাব্য ক্ষতি নির্দেশ করে। মেশিন লার্নিং (এমএল) মডেলগুলিকে জলের প্রবাহ বা চাপের পরিবর্তনের মত ক্ষতির নির্দিষ্ট কারণগুলি চিনতে প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে। এআই রিয়েল টাইম পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে সম্ভাব্য ফসলের ক্ষতি রোধের সাথে পানির অপচয়ও রোধ করে।
এআই চালিত চালক বিহীন ট্রাক্টর এবং ওঙঞ সেন্সরের মিলিত ব্যবস্থাপনা শ্রম ঘাটতির সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। তার পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় ফার্মিং রোবটের মাধ্যমে ধান কিংবা অন্যান্য সবজি চাষ করার মাধ্যমেও সর্বোচ্চ চাষাবাদের সময়ে শ্রমিক ঘাটতি কাটানো যায়। তার ফলে নির্ভুল চাষাবাদ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
কম্পিউটার ভিশন আগাছা এবং আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ প্রজাতি শনাক্ত করতে পারে। মেশিন লার্নিংয়ের সাথে একত্রিত হয়ে ফসল থেকে আগাছা আলাদা করতে পাতার আঁকার আকৃতি ও রং বিশ্লেষণ করে। শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শেষে এআই রোবটগুলি আগাছাকে পুড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে নির্মূল করে। এআই রোবট আগাছা এবং আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ প্রজাতি সনাক্ত করার পাশাপাশি কম্পিউটার ভিশনের মাধ্যমে কীট বা রোগের উপস্থিতিও শনাক্ত করতে পারে। এটি উদ্ভিদে পচাঁ, পোকামাকড় বা ফসলের স্বাস্থ্যের জন্য অন্যান্য হুমকি খুঁজে পেতে ছবি বিশ্লেষণ করে কাজ করে। ৯০% এর বেশি নির্ভুলতার সাথে আপেলের কালো পচাঁ শনাক্ত করতে এআই ব্যবহার করা হয়েছে। এটি একই মাত্রার নির্ভুলতার সাথে মাছি, মৌমাছি, মথ ইত্যাদি পোকামাকড় শনাক্ত করতে পারে।
অপরদিকে, এই সিস্টেমগুলি উপগ্রহের ছবি এবং এআই অ্যালগরিদম ব্যবহার করে আগের তথ্যের সাথে তুলনা করে এবং শনাক্ত করে যে পঙ্গপাল, ঘাসফড়িং ইত্যাদির মত কোন কীটপতঙ্গ অবতরণ করছে কিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে কৃষকদের স্মার্টফোনে সতর্কবার্তা পাঠায়, যাতে কৃষকরা প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে এবং ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এইভাবে এআই কৃষকদের পতঙ্গের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম করে তোলে।
কৃষকরা ভালো করেই জানেন, ভালো ফলনের জন্য কীটনাশকের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দূর্ভাগ্যবশত ম্যানুয়াল এবং স্বয়ংক্রিয় উভয় ক্ষেত্রেই কীটনাশকের প্রায়োগিক প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ম্যানুয়ালি কীটনাশক প্রয়োগ করলে যদিও নির্ভুলভাবে নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট এলাকা লক্ষ্য করে করা যায় কিন্তু এটি ধীর ও কঠিন কাজ। অন্যদিকে, স্বয়ংক্রিয় কীটনাশক প্রয়োগ করা কম সময় ও সহজ কাজ। তবে প্রায়শই সঠিকতার অভাব হয়। যা পরিবেশ দূষণের দিকে ধাবিত করে। এরিয়াল ইমেজিং পদ্ধতি কীটনাশক স্প্রে করতে নির্ভুলতা এবং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কাজ করে। এআই চালিত ড্রোনগুলি ম্যানুয়ালি ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির ত্রুটিগুলো এড়াতে প্রতিটি পদ্ধতির সর্বোত্তম সুবিধা প্রদান করে থাকে। প্রতিটি এলাকায় কিংবা নির্দিষ্ট এলাকায় কতটুকু কীটনাশক স্প্রে করা হবে ড্রোনগুলো তার জন্য কম্পিউটার ভিশন ব্যবহার করে এবং সুনির্দিষ্টভাবে ব্লকগুলো চিহ্নিত করে প্রতিটি ব্লকের জন্য তার প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগ করতে সহায়তা প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি এআই চালিত সিস্টেম স্ট্রবেরির এফিডের উপদ্রব শনাক্ত করতে ও কৃষকের ফোনে ডাটা ফেরত পাঠাতে পারে এবং পরবর্তী কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে পরামর্শ দিতে পারে। এছাড়াও যদি কীটনাশক প্রয়োজন হয় তার সাথে সংযুক্ত স্প্রেয়ারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্প্রে করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ড্রোনের মাধ্যমে কীটনাশক প্রয়োগ করলে কীটনাশকের ব্যবহার প্রায় ৯০% হ্রাস পায়।
নিরাপত্তা কৃষি খামার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কৃষি জমি বা খামারগুলো চোরদের জন্য একটি সাধারণ লক্ষ্যবস্তু কিন্তু কৃষকদের জন্য চব্বিশ ঘন্টা তাদের জমি ও ফসল পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। ভিডিও নজরদারির সাথে কম্পিউটার ভিশন এবং মেশিন লার্নিং (এমএল) একত্রিত হয়ে দ্রুত নিরাপত্তা লঙ্ঘন শনাক্ত করতে পারে।
ফলন ম্যাপিং এবং ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়। এটি কৃষকদের তাদের ফসলের ফলন ম্যাপিং এবং বৈশিষ্ট্যগুলো বুঝতে সহায়তা করে, যাতে আরো ভালো পরিকল্পনা করা যায়। থ্রিডি ম্যাপিং, সেন্সর এবং ড্রোনগুলো থেকে ফসল সম্পর্কিত ডেটাগুলিকে একত্রিত করে কৃষকদের ফসল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে থাকে। একাধিক ড্রোন ডেটা সংগ্রহ করে অ্যালগরিদম ব্যবহার করে সুনির্দিষ্ট ডেটা বিশ্লেষণে সক্ষম হয়। কৃষকরা ফসলের ব্যর্থতার পূর্বাভাস এবং ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঝুঁকি কমাতে পারে। ওহঃবষষড় খধনং নামে ভারতের একটি স্টার্টআপ কোম্পানি সফটওয়্যার এপ্লিকেশনের মাধ্যমে শাক-সবজি বিশ্লেষণ করতে এআই এবং কম্পিউটার ভিশন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। এটি ফসলের গুণমান, পরিপক্কতা এবং আকার সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।
মাঠে ফসল থাকা অবস্থায় সেন্সর এবং এআই সিস্টেমগুলি একত্রিত হয়ে কৃষকদের মাটিতে কতটা পানি এবং পুষ্টি রয়েছে তা নিরীক্ষণ করে জানাতে সক্ষম হয়। মাটি পর্যবেক্ষণে সেন্সর ব্যবহার করে এমন ডিভাইস স্থাপন করা হয় যা মাটির আর্দ্রতা,তাপমাত্রা, পিএইচ মাত্রা এবং পুষ্টি উপাদান পরিমাপ করে এআই সিস্টেমে তথ্য ফেরত পাঠায় যা পরবর্তীতে বিশ্লেষণ করে কৃষককে ফসলের অবস্থা সম্পর্কে জানায়। তার ওপর ভিত্তি করে কিভাবে তার ফসলের ক্ষেত্রগুলি সর্বোত্তমভাবে পরিচালনা করতে হবে সেই সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, এআই সিস্টেম মাঠের পুষ্টি বা ফসলের সঠিক ফলন না হওয়ার জায়গাগুলিকে চিহ্নিত করে, যেখানে মাটি খুব শুষ্ক বা খুব আদ্র এবং কখন, কোথায়, কতটা পানি প্রয়োগ করতে হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে থাকে।
কৃষকদের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো ফসলের দামের উঠানামা। অস্থিতিশীল মূল্যের কারণে, কৃষকরা কখনোই একটি নির্দিষ্ট উৎপাদন প্যাটার্ন পরিকল্পনা করতে সক্ষম হন না। টমেটোর মতো শস্যে এই সমস্যাটি খুব বেশি দেখা যায় কারণ এটির সেলফ টাইম খুবই সীমিত। এআই ব্যবহার করে আমরা বাজার ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দামের পূর্বাভাস জানিয়ে কৃষকদের মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস দিতে পারি।
মেশিন লার্নিং (এমএল) এর সাথে একত্রিত হয়ে কম্পিউটার ভিশন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ফসল কাটতে এবং মাড়াই করতে পারে। এছাড়াও একটি টমেটো কিংবা স্ট্রবেরির মতো ফসলকে পরিপক্বতার ক্রমানুসারে সংগ্রহ করতে পারে। এক্ষেত্রে তারা সর্বোত্তম নির্ভুলতার পরিচয় দিয়ে কৃষকদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
ফসলের বৃদ্ধি এবং পরিপক্কতা অনুমান করা কৃষকদের জন্য ক্লান্তিকর এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ কিন্তু এআই দ্রুত এবং সুনির্দিষ্টভাবে কাজটি পরিচালনা করতে পারে। এআই চালিত হার্ডওয়্যার, যেমন: সেন্সর ও ইমেজ সনাক্তকরণ সরঞ্জামের মাধ্যমে কৃষকরা ফসলের পরিবর্তনগুলি শনাক্ত করতে এবং ট্র্যাক করতে পারে, যার ফলে কৃষকরা ফসলের পরিপক্কতার সঠিক ভবিষৎদ্বানী পেতে পারে। গবেষণায় দেখা যায় যে, এআই ব্যবহার করে পাওয়া ফসলের পরিপক্বতার পাঠ মানব পর্যবেক্ষকদের দ্বারা অর্জিত পাঠের চেয়ে নির্ভুল হয়েছে। এই অর্জিত নির্ভুলতা কৃষকদের জন্য উল্লেখযোগ্য সঞ্চয় এবং উচ্চ মুনাফা আনতে পারে।
ফসল কাটা বা সংগ্রহ করা কিংবা মাড়াই করার পরেই এআইয়ের কাজ শেষ হয়ে যায় না। এআই এগুলোর পরও কৃষকদের সাহায্য করা চালিয়ে যেতে পারে। গাছের বেড়ে উঠার সাথে সাথে তারা যেমন ত্রুটি, রোগ এবং কীটপতঙ্গ শনাক্ত করতে সক্ষম হয় তেমনি ইমেজিং অ্যালগরিদমের সাহায্যে ত্রুটিযুক্ত পণ্য থেকে ভালো পণ্য বাছাই করার কাজও করতে পারে। এআই পদ্ধতি আকার, আকৃতি, রং এবং আয়তন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বাছাই এবং গ্রেডিং প্রক্রিয়াটিকে সর্বোচ্চ নির্ভুল করে তুলেছে, এমনকি একজন প্রশিক্ষিত পেশাদারের চেয়েও অনেক বেশি গতিসসহ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানীরা গাজর বাছাই এর একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি তৈরি করেছেন যাতে প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে তিনটি মানদন্ড সেট করা হয়েছে। প্রথম ধাপে, যে গাজরগুলির পৃষ্ঠে ত্রুটি এবং আকার, আকৃতি ও দৈর্ঘ্যের সমস্যা আছে সেগুলোকে আলাদা করার নির্দেশনা দেয়া থাকে। দ্বিতীয় ধাপে, একটি ভালো গাজরের সঠিক আকৃতি (উত্তল চতুর্ভূজ এর পেন্টাগন আকৃতি) দেয়া থাকে। যেসব গাজরের আকৃতি পেন্টাগন এআই তাদের বেছে নেয়। তৃতীয় ধাপে, যেসব গাজরের পৃষ্ঠে ফাটল কিংবা শিকড় থাকে না এআই তাদের বেছে নেয়। এই তিনটি মানদন্ডে এআই যথাক্রমে ৯৫.৫%, ৯৮% এবং ৮৮.৩% নির্ভুলতার হারসহ গাজর বাছাই এবং গ্রেডিং করতে সক্ষম হয়েছিলো। আমাদের বহুল ব্যবহৃত সবজি টমেটোতে এ মডেল প্রয়োগ করে দেখা গেছে যে, এআই ৯৫.৫% নির্ভুলতার সাথে টমেটোর গুণমানকে গ্রেডিং করতে পেরেছে। এক্ষেত্রে সাতটি ইনপুট বৈশিষ্ট্যসহ ইমেজ ডেটা ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই কায়িক পরিশ্রমের পরিমাণ প্রচুর। এমনকি মানুষের চেয়ে এআইয়ের নির্ভুলতার হার সর্বোচ্চ বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এআই প্রযুক্তিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের কাছে সহজবোধ্য করে তোলার জন্য করার জন্য চ্যাটবট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। চ্যাটবটগুলি কৃষক এবং তাদের গ্রাহক বা পরিবেশকদের মধ্যে একটি ইন্টারফেস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কৃষকরা এই কথোপকথনমূলক এজেন্টগুলিকে প্রদত্ত পণ্য বা পরিষেবাগুলি সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিতে, সরবরাহের অর্ডার নিতে ব্যবহার করতে পারেন। চ্যাটবটগুলি ফসল এবং মাটির অবস্থা সম্পর্কে তথ্যের ডেটাবেজ পরিচালনার জন্যও কার্যকর। এটি খামারের কাজগুলি সম্পাদনের জন্য ভার্চুয়াল খামার সহকারীর মত কাজ করে। উদাহরণ হিসেবে, গরপৎড়ংড়ভঃ নির্মিত ঋধৎসারনবং.নড়ঃ এর মতো চ্যাটবটের কথাই ধরা যাক। এটি ডেটার ভিত্তিতে কৃষকদের ব্যক্তিগত পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। প্ল্যাটফর্মটি কৃষকের প্রশ্নগুলি বুঝার জন্য প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ ও মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে এবং আবহাওয়া, বাজারের দাম এবং অন্যান্য কৃষি তথ্যের রিয়েল টাইম সুবিধা প্রদান করে থাকে।
অনেক লোক এআইকে শুধুমাত্র ডিজিটাল জগতের প্রযোজ্যতা বলে মনে করে। তাদের ধারণা শারীরিক কৃষি কাজের সাথে এর কোন প্রাসঙ্গিকতা নেই। এই ধারণাটি সাধারণত এআই প্রযুক্তির কাজ ও প্রয়োগের ধরন না জানার অভাবের কারণে হয়ে থাকে। বেশিরভাগ লোকেরা বুঝতে পারেনা এআই কিভাবে কাজ করে, বিশেষত প্রযুক্তি সম্পর্কে যাদের জ্ঞান শূন্য। তারা কৃষি সেক্টরকে এআই থেকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং এ প্রযুক্তি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে থাকে। যদিও কৃষি তার দীর্ঘ ইতিহাসে অগণিত প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং উন্নয়ন দেখেছে, তারপরও অনেক কৃষক সনাতনী পদ্ধতির সাথে বেশি পরিচিত। কৃষকদের একটি বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এআই এর মাধ্যমে কৃষিকাজ করতে অনাগ্রহ দেখানোর প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও, অমঃবপয প্রদানকারীরা প্রায়শই নতুন প্রযুক্তির সুবিধা এবং কিভাবে সেগুলি বাস্তবায়ন ও ব্যবহার করতে হবে তা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হন। কৃষিতে এআইয়ের প্রয়োগ বুঝতে সাহায্য করার জন্য সেবা প্রদানকারীদের প্রচুর পরিমাণে কাজ করতে হবে।
এটি বাস্তবায়ন করতে গেলে আমরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারি-
যদিও বৃহৎ মাপের কৃষি ব্যবসায় এই প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার করার জন্য যথেষ্ট পরিমান আর্থিক সচ্ছলতা রয়েছে কিন্তু ক্ষুদ্র ও প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষকরা এইসব প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার করতে অর্থনৈতিকভাবে বাঁধার সম্মুখীন হন। এআই তাদের নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণে সাশ্রয়ী প্রযুক্তি প্রদান করলে এই ব্যবধান দূর করা সম্ভব। এআই ক্ষমতাসহ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলি আবহাওয়ার পূর্বাভাস, কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা এবং ফসল সম্পর্কে স্থানীয় তথ্য সরবরাহ করতে পারে। এই প্রযুক্তিগুলি ক্ষুদ্র কৃষকদেরকে তাদের উৎপাদনশীলতা এবং আয় বাড়াতে জ্ঞাত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে।
যদিও এআই প্রযুক্তিগুলি মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে সাশ্রয়ী হতে পারে তবে প্রাথমিক বিনিয়োগে তা ব্যয়বহুলতা এড়াতে পারবে না। অনেক কৃষি ব্যবসা ইতোমধ্যেই আর্থিকভাবে সংগ্রাম করছে। তাদের ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করা অসম্ভব হতে পারে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র কৃষক এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা প্রবল। তবে প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে এআই বাস্তবায়নের খরচ কমতে পারে। এজন্য ক্ষুদ্র কৃষক ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সরকারি অনুদান কিংবা ব্যক্তিগত তহবিল সংস্থাগুলির সহযোগিতা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
অপরিচিততা প্রায়শই নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলে, যা কৃষকদের এআইকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে অসুবিধা তৈরি কওে, এমনকি যখন এটি অনস্বীকার্য সুবিধা প্রদান করে তখনও। নতুন প্রযুক্তির সুযোগ নেওয়ার প্রতি অনিচ্ছা উদ্ভাবনের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখে এবং এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন শিল্পের লাভজনকতাকে আটকে রাখে। কৃষকদের বুঝতে হবে যে, এআই হলো ফিল্ড ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য সহজ প্রযুক্তির উন্নত সংস্করণ। কৃষি কর্মীদের এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে রাজি করাতে সরকারি এবং বেসরকারি খাতগুলোকে অনুপ্রেরণা, সংস্থান এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করা উচিত। এআই প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পণ্য সরবরাহ করার পাশাপাশি কৃষক এবং কৃষি ব্যবসার মালিকদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা প্রদান করতে হবে। যাতে তারা এসব প্রযুক্তি বুঝতে এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে পারে। সরকারকে অবশ্যই কৃষকদের আশ্বস্ত করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বুঝাতে হবে এআই প্রযুক্তিটি কৃষি ক্ষেত্রে কোন হুমকি নয় বরং আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করে।
বুঝার এবং অভিজ্ঞতার অভাব ছাড়াও কৃষি খাতে সাধারণত এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। অমঃবপয প্রদানকারী কোম্পানির জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি কাটিয়ে উঠার প্রধান উপায়গুলির মধ্যে একটি হলো, ধীরে ধীরে কৃষকদের কাছে যাওয়া। উদাহরণস্বরূপ, প্রথমে সহজ প্রযুক্তি প্রস্তাব করা। যেমন: একটি কৃষি ট্রেডিং প্লাটফর্ম। একবার কৃষকরা সহজ প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে উন্নত ও অধিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রযুক্তি প্রদান করা।
যেহেতু এআই এখনও বিকাশ করছে, এ প্রযুক্তির অবশ্যই সীমাবদ্ধতা থাকবে। সঠিক মডেলগুলি বিভিন্ন উচ্চমানের ডেটার উপর নির্ভর করে যা কৃষিতে দুষ্পাপ্য হতে পারে। সেন্সরসহ রোবটগুলির জন্য চাষের পরিবেশ পরিবর্তনের সাথে সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া কঠিন হতে পারে। এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার জন্য তথ্যের চলমান গবেষণা এবং বিশ্লেষণ প্রয়োজন। এআই এর সিদ্ধান্তগুলি ম্যানুয়ালি নিরীক্ষণ করা প্রযুক্তিটি গ্রহণের প্রাথমিক পর্যায়ে কার্যকর হতে পারে।
এছাড়াও, সমস্ত শিল্প জুড়ে এআই ব্যবহার সম্পর্কিত কোন বিশেষ নিয়মাবলী নেই। বিশেষত নির্ভুল কৃষি এবং স্মার্ট ফার্মিংয়ে এআই বাস্তবায়ন বিভিন্ন আইনি প্রশ্ন উত্থাপন করে। উদাহরণস্বরূপ, সাইবার আক্রমণ এবং ডেটা ফাঁসের মতো নিরাপত্তা হুমকি কৃষকদের সমস্যার কারণ হতে পারে। এটি অনুমেয় যে, এআই ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থাগুলি খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত করার লক্ষ্যে হ্যাকারদের দ্বারা লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
কৃষিতে এআই বাস্তবায়ন সাধারণভাবে শিল্পের জন্য এবং বিশেষ করে স্বতন্ত্র কৃষকদের জন্য অনেক ব্যবসার সুযোগ উন্মুক্ত করে দিবে। যদিও প্রযুক্তিটি ভালোভাবে প্রয়োগ করার জন্য এটির কার্যপ্রণালি সঠিকভাবে বুঝা প্রয়োজন। এই কারণেই এআই সরঞ্জাম তৈরীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলির একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সাথে অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিগুলো এআইকে তাদের কৃষি ব্যবসার চারপাশে একটি প্রযুক্তিগত ইকোসিস্টেম তৈরি করতে সহায়তা করবে। এইসব কোম্পানির অভিজ্ঞতা এআই কোম্পানিগুলিকে তাদের ব্যবসার পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণ করতে কাস্টম সমাধান তৈরি করতে সক্ষম। সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞরা কৃষককে কাস্টম ফার্ম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ইনডোর ভার্টিক্যাল ফার্মিং সলিউশন, নির্ভুল কৃষি বায়বীয় ড্রোন বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত ও ডেটাকে সঠিক ও স্বচ্ছভাবে ব্যবহার করতে সর্বাধিক সহযোগিতা প্রদান করবে। টেকসই চাষের জন্য ফসল ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার তৈরির জন্যও তাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এর মাধ্যমে কৃষকদের পরিবেশগত নিয়ম মেনে চলতে সহায়তা প্রদান করা যাবে। এটিতে বিভিন্ন ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং বিশ্লেষণের জন্য মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যাতে কৃষকরা ফসলের অবস্থার মূল্যায়ন করতে পারে এবং ঝুঁকিগুলো হ্রাস করতে পারে। এআই এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সমন্বয়তা কৃষকদের প্রযুক্তির একটি মসৃণ ক্ষেত্র উপহার দিতে পারবে।
কৃষি ধীরে ধীরে ডিজিটাল হয়ে উঠছে। কৃষকরা ক্রমবর্ধমানভাবে ডেটা সংগ্রহের জন্য এআই প্রযুক্তি ও সেন্সর ব্যবহার করছেন এবং এই ডেটার প্রাপ্যতা কৃষিতে এআইয়ের পথ সুগম করেছে। ফলস্বরূপ আমরা দেখছি বেশ কিছু কোম্পানি এআই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে যা কৃষিতে উপযোগী হয়ে উঠেছে, এখন আমরা এমন কিছু প্রযুক্তির কথা জানবো-
বর্তমানে কৃষিতে বহুল ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্লু রিভার টেকনোলজি। এটি মূলত আগাছা দমনে ব্যবহৃত একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা, যা তাদের কোম্পানির নামে নামকরণ করা হয়েছে। এটি সেন্সরের সাহায্যে আগাছা পর্যবেক্ষণ, সনাক্তকরণ এবং ধ্বংস করার জন্য কাজ করে। এই কোম্পানি সি এন্ড স্প্রে নামে আরেকটি রোবট তৈরি করেছে যা তুলা গাছের আগাছা নিরীক্ষণ এবং সুনির্দিষ্টভাবে স্প্রে করার জন্য কাজ করে থাকে।
ক্যালিফোর্নিয়া এবং অ্যারিজোনা দুটি কৃষি প্রধান অঞ্চল। এ দুটি অঞ্চলে অধিক পরিমাণে স্ট্রবেরির চাষ হয়। পরিপক্ব স্ট্রবেরি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংগ্রহ ও বাছাই করতে হয় কিন্তু প্রতি মৌসুমেই অঞ্চলগুলোতে শ্রমিকের অভাবে লক্ষ লক্ষ ডলারের ক্ষতি হয়। তাদের কথা চিন্তা করে ঐধৎাবংঃ ঈজজঙ জড়নড়ঃরপং একটি রোবট তৈরি করেছে। রোবটটি স্ট্রবেরি চাষীদের তাদের ফসল বাছাই এবং প্যাক করতে সহায়তা করে। এতে কায়িক শ্রম এবং মজুরি খরচ কমে যায়। ঐধৎাবংঃ ঈজজঙ জড়নড়ঃরপং বিশ্বাস কওে তাদের উদ্ভাবন অর্থ সাশ্রয়, শক্তির ব্যবহার হ্রাস এবং গুণমান উন্নত করবে।
বার্লিন ভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তি স্টার্টআপ চঊঅঞ প্লান্টিক্স নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে, যা মাটিতে সম্ভাব্য ত্রুটি এবং পুষ্টির ঘাটতি চিহ্নিত করতে পারে। অ্যাপটি গাছের রোগ সনাক্ত করতে ছবি ব্যবহার করে থাকে। একটি স্মার্টফোনের সাহায্যে সংগৃহীত ছবি সার্ভারের ছবির সাথে মিলে উদ্ভিদের স্বাস্থ্যের অবস্থা নির্ণয় করে।
মানব ইতিহাস জুড়ে দক্ষতা বাড়াতে এবং কৃষিকাজে জড়িত নিবিড় মানব শ্রমের পরিমাণ কমাতে দীর্ঘকাল ধরে কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে আসছে। উন্নত লাঙ্গল থেকে সেচ, ট্রাক্টর থেকে আধুনিক এআই এমন একটি বিবর্তনের পথে রয়েছে যা কৃষিতে উদ্ভাবন নিয়ে আসছে। আগামী বছরগুলিতে কৃষি এবং খাদ্য স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে এআই একটি ক্রমবর্ধমান বড় ভূমিকা পালন করবে তা নিশ্চিত। প্রযুক্তি সর্বদা কৃষির অগ্রভাগে রয়েছে, আদিম লাঙ্গল থেকে বর্তমান এআই পর্যন্ত প্রতিটি উদ্ভাবন কৃষির চ্যালেঞ্জ কমানোর সাথে সাথে দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে।
অন্যদিকে, কৃষিতে এআইয়ের সুবিধাগুলিও অনস্বীকার্য। স্মার্ট ফার্মিং টুলস, ইনটেলিজেন্ট অটোমেশন এবং এআই চালিত পণ্যগুলি পুনরাবৃত্তিমূলক সময় সাপেক্ষ কার্যক্রম সম্পাদন করে। যাতে কর্মীরা তাদের সময়কে আরো কৌশলগত ক্রিয়া-কলাপের জন্য ব্যবহার করতে পারে। কৃষি রোবটিক্সের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান সাশ্রয়ী মূল্যের কম্পিউটার ভিশনও কৃষিক্ষেত্রে এআই অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করছে। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত উদ্বেগ এবং খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য এআইয়ের হাতে যথেষ্ট সরঞ্জাম রয়েছে। এটি স্বাস্থ্যকর এবং উচ্চমানের পণ্যের জন্য রিয়েল টাইম মনিটরিংয়ের পাশাপাশি দক্ষতা, স্থায়িত্ব এবং সম্পদ বরাদ্দের উন্নতির মাধ্যমে আধুনিক কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে। এআই কৃষি পণ্যের সরবরাহ ও চাহিদা অপটিমাইজ করার জন্য একটি “স্মার্ট” কৃষি বাজারের জায়গা তৈরি করেছে। যা সনাতনী পদ্ধতিতে অপর্যাপ্ত ছিল। এটি একটি উদ্ভাবনী খাদ্য ব্যবস্থাপনার সমাধান না বরং কৃষি পণ্যের ই-মার্কেটপ্লেস পরিষেবা এবং উদ্ভাবনকে একীভূত করে।
আপনি কেবলমাত্র এআই কিনেই সেটি ব্যবহার শুরু করতে পারবেন না। এআই মূলত বাস্তব কিছু নয়, এটি প্রযুক্তির একটি সেট যা প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় হয়। সংক্ষেপে বলতে হলে, এআই অ্যালগরিদম মানুষের চিন্তা ভাবনার অনুকরণ করে। এটি প্রথমে শেখে তারপর ডেটার উপর ভিত্তি করে সমস্যার সমাধান করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে। কৃষিতে এআই চালিত রূপান্তরের জন্য শিল্পের পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। কিভাবে এআই চালিত সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করতে হয় সেই সম্পর্কে কৃষকদের শিক্ষিত এবং প্রশিক্ষিত করতে হবে। এআই এর সমস্ত সুবিধা পেতে কৃষকদের প্রথমে একটি প্রযুক্তি অবকাঠামো প্রয়োজন। অবকাঠামো তৈরি করতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে কিন্তু তা করার ফলে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকো সিস্টেম গড়ে উঠবে। এআই কিভাবে কাজ করে এবং বাস্তব জীবনে কৃষির প্রক্রিয়াগুলিতে প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে কিভাবে একীভূত করা যায় তা বুঝার জন্য সকল কৃষকদের কাছে এর সুবিধাগুলি সর্বাধিক করা গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণেই একটি বিশেষজ্ঞ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সাথে অংশীদারিত্ব এআই তৈরি কোম্পানির চমৎকার প্রথম পদক্ষেপ। অমঞবপয সেবা প্রদানকারীদের এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রত্যেককে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে যে তারা কিভাবে তাদের সরঞ্জামগুলি উন্নত, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং স্পষ্টভাবে এআই এবং মেশিন লার্নিং এর সুবিধাগুলো প্রকাশ করতে পারে। যদি এগুলো অর্জন করা যায়, কৃষিতে এআইয়ের ভবিষ্যৎ ফলপ্রসূ হতে বাধ্য।
মানব সভ্যতার সাফল্য মূলত তার কৃষি ব্যবস্থার অপ্টিমাইজেশনের উপর নির্ভরশীল। সনাতনী কৃষি পদ্ধতি এখন সেকেলে হয়ে যাচ্ছে। এখন প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তিগত সমাধান। বিশ্বব্যাপী শিল্পগুলিতে অটোমেশন এর প্রভাব সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য শিল্পের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তি এখন কৃষিকেও রূপান্তরিত করতে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করছে এবং কৃষিতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর প্রভাব বিশাল হতে চলেছে। মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রধান উপাদান খাদ্য কৃষি ছাড়া সম্ভব নয়। টেকসই চাষের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা বিবেচনা করে এই প্রযুক্তিটি বাস্তবায়ন কৃষির জন্য একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ হতে পারে। কৃষিতে এআইয়ের চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতাগুলিকে সমাধান করে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। কৃষিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলেই ক্রমবর্ধমান খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা করার মাধ্যমে পৃথিবীর বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ করার মাধ্যমে মানব সভ্যতার টিকে থাকা নিশ্চিত হবে।
শিক্ষার্থী,
আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স এন্ড মেশিন লার্নিং
জওহরলাল নেহরু টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি,
হায়েদ্রাবাদ, ভারত।