তোমরা নিশ্চয়ই ছাতা দেখেছো। এখন যদি বলি ছাতাকৃতির মাছ দেখেছো কিনা? অনেকেই বলবে না। কারণ বাংলাদেশের সামুদ্রিক অঞ্চলে একে দেখা যায় না৷ আর যারা এর সম্পর্কে জানো তারাও সরাসরি দেখোনি। হয়তো আমাদের ভার্চুয়াল জগতের কল্যাণে এর সম্পর্কে জানতে পেরেছো। তোমাদেরকে বলছি জেলিফিশের কথা।
জেলিফিশকে মাছ বলা হলেও আসলে এটি মাছ নয়। এর কোনো মেরুদণ্ড নেই৷ জেলিফিশ পৃথিবীর প্রায় সব মহাসাগরে দেখতে পাওয়া যায়। আমরা একে মাছ বললেও এটি একটি অমেরুদণ্ডী প্রাণী। এদের শরীরে কোনো মস্তিষ্কও নেই, এমনকি রক্তেরও কোনো উপস্থিতি পাওয়া যায় নি। তোমাদেরকে আগেই বলেছি এটি দেখতে অনেকটা ছাতাকৃতির। এটি প্রাণীজগতের নিডারিয়া পর্বের সিফোজোয়া শ্রেণীর অন্তর্গত। বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে অঁৎবষরধ ধঁৎরঃধ বলে।
নিডারিয়া পর্বের প্রাণীদের মধ্যে জেলিফিশ মুক্ত সাঁতারু সদস্য। বিচিত্র বর্ণময়তার কারণে এরা সমুদ্রকে বর্ণিল রূপদানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে। এজন্য নিডারিয়া পর্বের প্রাণীদের ‘সমুদ্রের ফুল’ বলা হয়।
জেলিফিশের শরীর মূলত দুটি অংশে গঠিত- ছাতার মতো জেলিটিন সমৃদ্ধ অংশ এবং ঝুলে পড়া টেন্টাকেলাস। টেন্টাকেলাসে ‘নেমাটোসিস’ নামক অঙ্গ থাকে। নেমাটোসিসের সাহায্যে জেলিফিশ শিকার করে থাকে।
জেলিফিশের অত্যন্ত স্পর্শকাতর অনুভূতিবাহী স্নায়ু রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো- উরংবংঃরাব ঈধারঃু, ইবষষ, ঞবহঃধপষবং. এর শরীরে প্রায় ৯৫% পানি থাকে, যেখানে মানুষের শরীরে শতকরা পানি থাকে ৬০%। এরা সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে থাকতে পছন্দ করে। পৃথিবীতে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন প্রজাটির জেলিফিশ রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা ৫০০০ কোটি বছর ধরে সাগরে এদের বসবাস।
জেলিফিশের জীবনচক্র শুরু হয় লার্ভা থেকে। তারা দুটি পদ্ধতিতে প্রজনন করে। যৌন ও অযৌন পদ্ধতিতে।
যৌন পদ্ধতিতে জীবনচক্র শুরু করার সময় পুরুষ জেলিফিশ সর্বপ্রথম সাগরের তলায় স্পার্ম ছাড়ে। তার থেকে কিছু স্পার্ম স্ত্রী জেলিফিশের দেহে প্রবেশ করে। এরপর ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন ঘটে। তার পরপরই জন্ম নেয় মুক্তভাবে সাঁতার কাটা লার্ভা, যাকে প্লানুলা বলে। এই প্লানুলা সাঁতরে সাগরতলে গিয়ে কোনো পাথরের গায়ে আশ্রয় নেয়। কিছুদিন পর এই প্লানুলা আকার আকৃতি নিয়ে পলিপে রূপ নেয়। পলিপ থেকে জন্ম নেয় ছোট্ট ছাতার মতো শরীর এবং অনেকগুলো কর্ষিকাযুক্ত জেলিফিশ। জেলিফিশগুলো এক সপ্তাহ পর যৌন পরিপক্বতা লাভ করে। তারা পুরুষ কিংবা মহিলা জেলিফিশে পরিণত হয়। এই দশাকে বলে মেডুসা বা যৌন দশা। এই দশায় এসে তাদের আকার হয় ৫ মি.মি. এর মতো। পরিপক্ব মেডুসারা আবারও যৌন প্রজননের মাধ্যমে এই চক্রের পুনরাবৃত্তি করে এবং প্রজনন শেষে একসময় মারা যায়।
অযৌন পদ্ধতিতে এরা দুইটি পদ্ধতিতে প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। প্রথমটি হলো পুনরুৎপত্তি দ্বিতীয়টি হলো মুকুলোদগম।
অযৌন পদ্ধতিতে পুনরুৎপত্তি করার সময় এদের শরীরের মাঝখানে চিড় ধরে আবার সেটা সম্পূর্ণ জোড়া লেগে যায়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর পুনরায় টিস্যুগুলো জন্ম নিলে সেগুলো অবিকল আগের মতো রূপ নেয়। সবশেষে ওই অংশটি একটি সম্পূর্ণ জেলিফিশে রূপান্তরিত হয়।
মুকুলোদগম প্রক্রিয়া প্রথমে যৌন পদ্ধতিতে প্রজননের মতোই সংঘটিত হয়। পলিশ দশায় এসে মূলত এটি যৌন পদ্ধতির থেকে আলাদা হয়ে যায়। পলিপে অনেকগুলো কুঁড়ি থাকে। প্রতিটি কুঁড়ি থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ জেলিফিশ হতে পারে। এই পদ্ধতিতে পলিশ দশা থেকে পূর্ণাঙ্গ জেলিফিশ আবার পূর্ণাঙ্গ জেলিফিশ থেকে পলিপ এই পুনরাবৃত্তি বারবার ঘটতে থাকে। এটিকে ঞৎধহংফরভভবৎবহঃরধঃরড়হ বলে।
জেলিফিশ তার শারীরিক শক্তি ব্যবহারে দারুণ পারদর্শী। আমাদের যদি প্রশ্ন করা হয় আমরা যতটুকু খাই ততটুকুই কি শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি, উত্তর হবে না। কারণ আমরা যা কিছুই করি না কেন শক্তির সামান্যতম ক্ষয় হলেও থাকে। কিন্তু জেলিফিশের ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। জেলিফিশ অন্যান্য সব প্রাণীর থেকে কম শক্তি ব্যয় করে। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে আমাদের মনে হবে জেলিফিশ নিজের শরীরকে সামনের দিকে ধাক্কা দিয়ে চলাফেরা করে। এতে পানির সাথে ঘর্ষণের ফলে শক্তি ব্যয় হবার কথা বেশি। কিন্তু না, এই প্রক্রিয়ার ফলে জেলিফিশের শরীরের পিছনের পানিতে তৈরি হয় একটা ঘূর্ণি যা তাকে ঠেলে সামনে এগিয়ে দেয়। এ কারণে জেলিফিশ তার শরীরের ১ শতাংশ পেশি দিয়েও সক্ষমভাবে চলতে পারে।
ঞঁৎৎরঃড়ঢ়ংরং উড়ধৎহর নামক জেলিফিশের প্রজাতিটি অমর প্রজাতি নামে সারাবিশ্বে পরিচিত। এটি পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী যেটি তার জীবনচক্রে পুনরাবৃত্তি ঘটায়। এই প্রজাতির জেলিফিশগুলো সাধারণত অযৌন প্রজননের মুকুলোদগম পদ্ধতিতে প্রজনন করে যাকে ঞৎধহংফরভভবৎবহঃরধঃরড়হ বলে।
অষ্ট্রেলিয়ান বক্স জেলিফিশের একটি প্রজাতি রয়েছে। যার নাম ঈযরৎড়হবী ঋষবপশৎর. এটি সারাবিশ্বে বিষাক্ত প্রজাতি নামে পরিচিত। এটি মানবজাতির সমস্যার মূল কারণ। এটি বিশ্বে সর্বাধিক বিষপূর্ণ প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হয়। ঈযরৎড়হবী ঋষবপশৎর প্রজাতিটি প্রায় ১০ ফিট (৩ মিটার) লম্বা হতে পারে। চিন্তা করে দেখতে পারো! কোনো ৬ ফিটের (১.৮ মিটার) মানুষও যদি হয় তার থেকে এটি প্রায় ৪ ফিট (১.২ মিটার) বেশি লম্বা হতে পারে।
এই প্রজাতির জেলিফিশ মানুষের শরীরে দংশন করলে মানুষের শরীর সারাজীবনের জন্য অচল হয়ে যেতে পারে অর্থ্যাৎ, প্যারালাইসিস হতে পারে, হতে পারে হৃদপিন্ডের সমস্যা। এমনকি এর ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে কয়েক মিনিটের মধ্যে। ফিলিপাইনে প্রতিবছর ২০-৪০ জন মানুষ মারা যায় এর কারণে।
তোমরা জেনে অবাক হবে যে, খাদ্য হিসেবেও গ্রহণ করা যায় এই জেলিফিশ। ডেনমার্কের গ্যাস্ট্রো পদার্থবিজ্ঞানী মি টোরবর্গ পেডেরসেন জেলিফিশ থেকে মচমচে চিপস তৈরি করে দেখিয়েছেন। তিনি সেগুলো দিয়ে সুস্বাদু রান্না করার প্রক্রিয়াও খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করেন।
জেলিফিশ থেকে তৈরি চিপস খেতে অনেকটা মাছের মতো। কেউ কেউ তার তৈরি এই চিপস খেয়ে বলেছেন এর স্বাদ আলুর মতো অনেকটা। খেতে হালকা লবনাক্তও লাগে। যদিও সব ধরনের চিপসই খেতে হালকা লবনাক্ত লাগে। সর্বোপরি বুঝা গেলো স্ন্যাকস জগতে আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে জেলিফিশ। পৃথিবীবাসির নাস্তা হিসেবে অন্যান্য খাবারের সাথে যুক্ত হতে পারে এটি। এই প্রজাতির জেলিফিশগুলো ডেনমার্কের উপকূলে পাওয়া যায় সাধারণণ। এদের শরীরে বিষাক্ততা না থাকার কারণে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়।
জেলিফিশের চিপস তৈরি করার জন্য প্রথমে সমুদ্র থেকে জেলিফিশ সংগ্রহ করে এদের পেট পরিষ্কার করে নিতে হয়। তারপর জেলিফিশের শরীর থেকে পানি ছাড়ানোর জন্য একে অ্যালকোহলে ভিজিয়ে রাখতে হয়। অ্যালকোহল শুধুমাত্র এর পানিই বের করে দেয় না, শরীরের কাঠামোও নষ্ট করে দেয়। এর ফলে জেলিফিশের মৃত্যু হয়। দুইদিন অ্যালকোহলে ভিজিয়ে রাখার পর তুলে একে ওভেনের সাহায্যে শুকানো হয়। ঘন্টাখানেক পরে অ্যালকোহল শুকিয়ে তৈরি হয়ে যায় জেলিফিশের মচমচে সুস্বাদু চিপস।
অবাক করা ব্যাপার হলো জেলিফিশ ব্যবহার করা যায় কসমেটিক শিল্পেও। কসমেটিক শিল্পের মৌলিক উপাদান তৈরি করা সম্ভব জেলিফিশ থেকে। এই কারণে এই শিল্পেও এর চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে তিউনিশিয়ার মানুষ এর সফল ব্যবহার করেছে। তারা কসমেটিক শিল্পের পাশাপাশি ওষুধ শিল্পেও এর সম্ভাবণা দেখতে পাচ্ছে।
জেলিফিশের শরীরের উজ্জ্বলতার কারণ হিসেবে আবিষ্কৃত (এঊচ) অর্থ্যাৎ, এৎববহ ঋষঁড়ৎবংপবহঃ চৎড়ঃবরহ কে কাজে লাগিয়ে এক ধরণের খরগোশ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই খরগোশের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা অন্ধকারের মাঝে জ্বলতে থাকে। যা অন্যান্য খরগোশ থেকে তাদের আলাদা করেছে, বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে করেছে আকর্ষণীয়।
জেলিফিশকে সমুদ্রসুন্দরী বলা হলেও এর অপকারও দুশ্চিন্তায় ফেলে প্রতিনিয়তই মানুষকে। কারণ এটি সুন্দরের চেয়ে ক্ষতি করতে পারে অনেকটা বেশি।
জেলিফিশের কারণে কোনো এলাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হতে পারে অনেক বেশি। যেমনটা হয় কুরিয়াতে। জেলিফিশ তাদের মৎস্য সম্পদের এতো পরিমাণ ক্ষতি করে যে, তারা জেলিফিশ পরিষ্কার করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পর্যন্ত ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তাদের তৈরিকৃত রোবটগুলো ঘন্টায় ২ হাজার পাউন্ড জেলিফিশ সাফ করতে পারে। এতো পরিমাণ জেলিফিশ জন্ম নেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে তাদের শরীরে সঞ্চিত শক্তি। অন্যান্য প্রাণী চলাচলে অধিক পরিমাণ শক্তি ব্যয় করলেও জেলিফিশের শক্তি ব্যয় হয় খুবই নগন্য। এ কারণে তারা বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেকটা বেশি শক্তি ব্যয় করতে পারে।
জেলিফিশ যে শুধুমাত্র মৎস্য সম্পদের ক্ষতিই করে তা নয়, যার সাক্ষী হয়ে আছে সুইডেন। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে মুন জেলিফিশের দল ঢুকে পরে সুইডেনের অস্কারশ্যাম নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরের ইনটেক পাইপের ভিতরে। এর ফলে পুরো প্লান্টটি বন্ধ করে এগুলোকে সাফ করে পুনরায় প্লান্টটি চালু করতে হয়েছিলো।
তোমাদের কি মনে হয়! জেলিফিশ কি ঘুমাতে পারে? অনেকেই বলতে পারে যাদের কোনো মস্তিষ্ক নেই, নেই কোন হৃদপিণ্ড তারা ঘুমাবে কিভাবে! কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে জেলিফিশ ঘুমাতেও পারে। বিজ্ঞানীদের দাবি ক্যাসিওপিয়া নামক এক প্রজাতির জেলিফিশ দিনের অধিকাংশ সময় সাগরের তলদেশে ঘুমিয়ে কাটায়।
তোমাদেরকে অবাক করে দিয়ে আরেকটি তথ্য জানিয়ে রাখি জেলিফিশ মানুষের মতো নাচতেও পারে। জেলিফিশ তার ছাতার মতো অংশকে উপরের দিকে ঠেলে দিয়ে কর্ষিকাকে উপরের দিকে টেনে নিয়ে যে নৃত্য করে তাকে জেলিফিশের নাচ বলা হয়। তারা একক কিংবা দলীয়ভাবে এটি করে থাকে। অনেক সময় উল্টোভাবেও তারা এই নৃত্য করে থাকে। ছাতার মতো অংশকে নিচের দিকে ঠেলে দিয়ে কর্ষিকাকে নিচের দিকে টানার মাধ্যমে। জেলিফিশ নৃত্য করার সময় যখন তার দেহ থেকে আলোর বিচ্ছুরণ করে তখন দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগে।
জেলিফিশের কারণে নোবেল পুরষ্কারও পেয়েছে বিজ্ঞানীরা। জেলিফিশের উজ্জ্বলতা নিয়ে গবেষণার কারণে ওসামু শিমোমুরা, মার্টিন চেলফি ও রজার ওয়াই ২০০৮ সালে রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পান। জেলিফিশের উজ্জ্বলতার কারণ হিসেবে তারা খুঁজে পান বিশেষ ধরনের প্রোটিন যার নাম দেওয়া হয় এৎববহ ঋষঁড়ৎবংপবহঃ চৎড়ঃবরহ যাকে সংক্ষিপ্তাকারে (এঊচ) বলে।
আমরা জানি, মহাকাশে নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা করে থাকে (ঘঅঝঅ) নাসা। একটি মহাকাশ গবেষণার অংশ হিসেবে তারা কতোগুলো জেলিফিশ পাঠায় মহাকাশযানে করে। আশ্চর্যের বিষয় না! আমরা প্রতিনিয়ত মহাকাশযানে চড়ার স্বপ্ন দেখে যাই। আমাদের মহাকাশযানে চড়বার সৌভাগ্য না হলেও জেলিফিশের সেটি হয়েছে। কিন্তু সেখানে অভিকর্ষ না থাকায় ঘটে বড় বিপত্তি। পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পর দেখা যায় তারা ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। যেমনটা হয়ে থাকে আমাদের ক্ষেত্রে। আমাদের অনেককেই যখন মাটি থেকে উপরের দিকে উঠানো হয় মাথা ঘুরতে থাকে। এটা মূলত হয় উচ্চতাভীতির কারণে। তার মানে আমরা বুঝতে পারি জেলিফিশের উচ্চতাভীতি রয়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশে একটি লেকের নামই আছে ‘জেলিফিশ লেক’ নামে। আয়তনে এটি প্রায় ১২ একরের মতো। এর পানি লবনাক্ত হওয়ার কারণে এর অপর নাম ‘সল্ট লেক।’ গোটা লেকই যেন জেলিফিশের এক স্বর্গরাজ্য।
জেলিফিশ লেকে পর্যটকদের জন্য সাঁতার কাটারও সুব্যবস্থাও রয়েছে। জেলিফিশকে কাছ থেকে দেখতে হলে যেতে হবে লেকের একদম মাঝখানে। চারপাশে দেখবে শুধু জেলিফিশ আর জেলিফিশ। এখানে দুই প্রজাতির জেলিফিশ রয়েছে। কোনোটির আকার পিংপং বলের মতো, কোনোটি আবার ক্রিকেট বলের মতো।
জেলিফিশের আকার কয়েক সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে কয়েক মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এমন অনেক জেলিফিশ সচরাচর দেখা যায় যেগুলো সাধারণত মানুষ থেকেও বড়। সম্প্রতি শ্মিট ওশান ইনস্টিটিউটের (ঝপযসরফঃ ঙপবধহ ওহংঃরঃঁঃব) গবেষকরা অষ্ট্রেলিয়ার সমুদ্রে এক ধরনের জেলিফিশের দেখা পেয়েছেন। যেটির আকার সমুদ্রের দানব নামে পরিচিত ‘নীল তিমির’ চেয়েও দ্বিগুণ। ১৫০ ফুটের চেয়েও দীর্ঘ এই জেলিফিশটি। নীল তিমিকে ছাড়িয়ে এটিই এখন সমুদ্রের দীর্ঘতম প্রাণী হিসেবে বিবেচিত।
সর্বোপরি অনেক প্রজাতির জেলিফিশ আমাদের ক্ষতির কারণ হলেও অনেক শিল্পে এর সম্ভাবনা প্রখর। অনেক চিকিৎসাবিজ্ঞানী মনে করেন এর মাধ্যমে ক্যান্সারের মতো দুরারোধ্য ব্যাধির ওষুধ তৈরি করা সম্ভব। জেলিফিশের ক্ষতিকর দিকগুলো আমরা সচেতন থাকলেই কাটিয়ে উঠা সম্ভব। আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করি যে, এর ক্ষতির দিকগুলো গৌণ বিবেচনা করে মানব জাতির কল্যাণে এর ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে মানবজাতি সফল হবে। যার ফলে উন্মোচিত হবে নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার।